
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালন করেই থেমে নেই; বরং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনের পাশে থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
২০ জুলাই (রোববার) সকালে ঢাকা সেনানিবাসে ‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ–২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক পেশাদার, দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান বাহিনী। শান্তিকাল হোক কিংবা সংকটকাল— দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে তারা সর্বদা প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, সেনা সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছেন। দুর্যোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিংবা নির্বাচন—সবক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে তিনি “আন্তরিকতা ও ত্যাগের প্রতীক” বলে অভিহিত করেন।
সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও নিযুক্তিগত উপযুক্ততা— এই সবগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।”
তিনি নির্বাচন পর্ষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব অফিসার রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে সামরিক জীবনের বিভিন্ন স্তরে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরই উচ্চতর পদে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পদোন্নতি যেন যোগ্যতার নিরিখে হয়, সেজন্য তিনি স্বচ্ছ ও নীতিনিষ্ঠ প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাতির নিরাপত্তা ও জাতীয় প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আপনাদের পেশাদারিত্ব, আত্মত্যাগ এবং দায়িত্বশীলতা এই রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে শক্ত ভিত হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি সেনাবাহিনীকে সবধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও প্রস্তুত ও সক্ষম হতে ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্যোগকালীন ত্রাণ কার্যক্রম, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুত্ব দিনদিন বাড়ছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর কার্যকর, স্বচ্ছ ও দেশপ্রেমনির্ভর নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।