
কানাডা সফর শেষে নগর উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। রোববার (২৭ জুলাই) বাটালি হিলস্থ প্রধান নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সফর প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, “টরন্টো ও মন্ট্রিয়লে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, পরিবেশবান্ধব নগর গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”
তিনি জানান, কানাডার কনকর্ডিয়া ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া অন্টারিওর এমপিপি মেরি-মার্গারেট ম্যাকমাহন ও টরন্টো সিটির মেয়র অলিভিয়া চৌ-এর সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু সহনশীলতা, স্টার্টআপ উন্নয়ন এবং দক্ষ জনশক্তি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, “টরন্টো সিটির সঙ্গে সিস্টার সিটি সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত খুলবে।” সফরে তিনি এমপিপি ডলি বেগম, সালমা জাহিদসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
স্বাস্থ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ে মেয়র জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী ১০০ দিনের বিশেষ মশক নিধন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এডিস মশার লার্ভা জন্মের উৎস রোধে বাসাবাড়ির পানি জমে থাকা জায়গাগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, “চিকুনগুনিয়ার প্রভাব বর্ষায় ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি। প্রতিটি হটস্পট ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা নজরদারি করছি, প্রয়োজনে আমি নিজে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করব।”
শিশু নিরাপত্তা ও নালায় মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন,সম্প্রতি হালিশহরে নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে মেয়র বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রথমত পরিবারের দায়িত্ব। সিটি কর্পোরেশন সব নালা ঢেকে দিতে পারে না, কিছু নালা সার্ভিস লাইন হিসেবে খোলা রাখতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি গার্মেন্টস এলাকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি, আমাদের আওতায় নয়। পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে।”
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবার মান উন্নয়ন নিয়ে মেয়র বলেন, “আমরা ডোর-টু-ডোর ময়লা সংগ্রহ প্রকল্প চালু করেছি। প্রতি পরিবার ৬০ টাকা প্রদান করছে। কেউ অতিরিক্ত টাকা চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, কানাডার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এছাড়া, জাপান, কোরিয়া, কানাডা, চীন ও নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প (Waste to Energy) বাস্তবায়নে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নাগরিক সমস্যা সমাধানে খুব শিগগিরই “আমার চট্টগ্রাম” নামে একটি অ্যাপ চালু হচ্ছে বলেও মেয়র জানান। এর মাধ্যমে নাগরিকরা সরাসরি সমস্যার রিপোর্ট করতে পারবেন।
কর্মচারী শৃঙ্খলা বিষয়ে: ডা. শাহাদাত বলেন, “অনুপস্থিত ও দায়িত্বহীন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৪৮ থেকে ৫০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন:
সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী (অঃ দাঃ) মো. ফরহাদুল আলম, মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা এবং মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান জিয়া।