
‘মিনিকেট’ নামে বাজারে চাল বিক্রির মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা বন্ধে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সরকারের আরেক সংস্থা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই উদ্যোগকে কার্যত থামিয়ে দিয়েছে—যা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের ভেতরের করপোরেট দখলদারিত্ব ও নীতির দ্বিমুখিতা নিয়ে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে এক অফিস আদেশে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে পরামর্শ না নিয়ে ‘মিনিকেট’ চাল নিয়ে কোনো কার্যক্রম না চালানোর নির্দেশনা দেয়। সরকারি চিঠির (স্মারক নং: ২৬.০০.০০০০.১৫১.১৮.০০০২.২৫.২৩) হাইলাইট করা অংশে বলা হয়েছে:
“খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ব্যতিরেকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-কে বিরত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”

এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় নেওয়া স্বাধীন কোনো সিদ্ধান্ত—যা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারত—তা করপোরেট ব্যবসায়ীদের চাপে স্থগিত হয়ে গেল। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, বাজারে প্রভাবশালী কিছু চাল মিল মালিক ও আমদানিকারক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চাপ সৃষ্টি করে এই নির্দেশ আদায় করে নেয়।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন,ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা
‘মিনিকেট’ নামটি কোনো চালের সরকার স্বীকৃত জাত নয়। এটি এক ধরনের কৌশল, যার মাধ্যমে সাধারণ চালকে পালিশ করে চকচকে করা হয় এবং ভোক্তাকে বিভ্রান্ত করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। ভোক্তা অধিদপ্তর এই ‘ভুয়া নামের’ ব্যবহার বন্ধে অভিযান শুরু করেছিল।
কিন্তু এখন সেই অভিযান থেমে যাওয়ায় প্রতারণার পথ আবার উন্মুক্ত হয়ে গেল বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। একটি সংস্থা যখন জনগণের পক্ষে কথা বলছে, তখন অন্য একটি প্রভাবশালী মন্ত্রণালয় কেন সেটিকে থামিয়ে দিচ্ছে—তা নিয়েই এখন উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন,
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থনীতিবিদ বলেন, “এই চিঠি প্রমাণ করে, করপোরেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সাধারণ ভোক্তার অধিকারকে নয়। এটি দুর্ভাগ্যজনক ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।”
ভোক্তাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এটা শুধুই একটি সরকারি চিঠি নয়—এটা জনগণের স্বার্থে কাজ করতে চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে করপোরেট স্বার্থে বাধা দেওয়ার একটি ভয়াবহ নিদর্শণ।
জুলাই আন্দোলনের এই বর্ষপূর্তিতে এসে আমাদের জাতীয় জীবনের বহু প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত হলো আরও একটি—
সরকার কি জনগণের, নাকি করপোরেট মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর?