বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন

রংপুর প্রেসক্লাব: আদালতের রায়ে গৌরব ও ঐতিহ্য সুরক্ষিত

রংপুর প্রতিনিধি
  • বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৭৮

রংপুর প্রেসক্লাবে প্রশাসকের মাধ্যমে অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ বহাল রেখেছে আদালত। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রংপুর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ফারহানা খান এ রায় দেন। আদালতের এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রেসক্লাবের সদস্যরা। তারা মনে করছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

প্রেক্ষাপট

প্রেসক্লাব সূত্রে জানা যায়, পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও রহস্যজনকভাবে ৩৩ বছর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রেসক্লাবকে রেজিস্ট্রেশন দেয়। এরপর থেকে আর কোনোদিন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা হয়নি, সমাজসেবাও কখনো তাগিদ দেয়নি। তবে সম্প্রতি বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত কয়েকজন ব্যক্তি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রেসক্লাবে প্রশাসক নিয়োগে ভূমিকা রাখেন।

প্রশাসক দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ১৩ মে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে নতুন সাধারণ সদস্য অন্তর্ভুক্তির নোটিশ জারি করেন। পরে ৮ জুলাই খসড়া তালিকা প্রকাশ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় প্রেসক্লাব কমিটি আদালতে মামলা দায়ের করে নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করলে আদালত প্রথমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে প্রশাসকের আপিল খারিজ করে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন।

সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া

প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য আবদুর রউফ বলেন, “কিছু অপসাংবাদিক ষড়যন্ত্র করে প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা চালাচ্ছিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রেসক্লাব আমাদের পেশাজীবী সংগঠন। এখানে অবৈধভাবে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আদালতের আদেশে প্রমাণ হয়েছে—ন্যায় সবসময় জয়ী হয়।”

সদস্য রেখা মনি বলেন, “প্রশাসকের পদক্ষেপে প্রেসক্লাবের ঐতিহ্য ও গণতান্ত্রিক চর্চা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আদালতের সিদ্ধান্তে আমরা সেই ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেলাম।”

সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাবলী জানান, “আদালতের রায়ে আমরা আশ্বস্ত। প্রশাসকের ষড়যন্ত্রে প্রেসক্লাবের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা আমাদের রক্ষা করেছে।”

আইনজীবীদের মন্তব্য

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসক প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করেছিলেন। আমরা আদালতে তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো জবাব দিতে পারেনি। আদালত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।”

তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী আন্দোলন, জুলাই বিপ্লব ও শেখ হাসিনার শাসনামলসহ রংপুরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। প্রশাসক সেগুলো নষ্ট করতে পারে। তাই দ্রুত দায়িত্ব কমিটির হাতে ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি।”

বাদীপক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাড. মাহে আলম বলেন, “আদালত ফুল হেয়ারিং শেষে আমাদের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। ফলে অবৈধ সদস্য অন্তর্ভুক্তির চক্রান্ত বন্ধ হলো। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, প্রেসক্লাব তার ন্যায়বিচার পেতে চলেছে।”

আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় রংপুরের সাংবাদিক সমাজে স্বস্তি নেমে এসেছে। তারা মনে করছেন, প্রেসক্লাবের ঐতিহ্য, গৌরব ও গণতান্ত্রিক চর্চা রক্ষায় এটি এক বড় জয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর