মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইসির রোডম্যাপ ঘোষণা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৩৭

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ রোডম্যাপে আসনভিত্তিক সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল ও দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন সম্পন্ন করা সহ মোট ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।

তফসিল ও ভোটের সম্ভাব্য তারিখ

ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী—

২০২৫ সালের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

তফসিল ও ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে আগামী রমজানের আগেই ভোট শেষ করতে। রমজান সম্ভবত ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে পারে, তবে তা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করবে। এভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়কাল অনুমান করা যায়।”

নির্বাচনী প্রস্তুতি ও হেলিকপ্টার সহায়তা পরিকল্পনা

ইসি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। তাদেরকে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র, কক্ষ সংখ্যা, নিকটবর্তী হেলিপ্যাড, যাত্রার শুরু ও শেষ স্থান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পাঠাতে হবে।

তফসিল ঘোষণার ১০ দিন আগে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষসংখ্যার ভিত্তিতে টেকঅফ ও ল্যান্ডিং স্টেশন নির্দিষ্ট করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যাতায়াত নিশ্চিতের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা বিষয়ক প্রস্তাবনা প্রস্তুত করতে হবে।

রোডম্যাপে অগ্রাধিকার পাওয়া কার্যক্রমসমূহ

১. সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ।
২. চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ।
৩. রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সম্পন্ন।
৪. দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন অনুমোদন।
৫. প্রবাসী ভোটার সংক্রান্ত প্রক্রিয়া।
৬. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারযোগ্য আসন নির্ধারণ।
৭. ভোটকেন্দ্র তালিকা ও কক্ষ সংখ্যা চূড়ান্তকরণ।
৮. নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনা।
৯. হেলিকপ্টার সহায়তার আওতাধীন এলাকা নির্ধারণ।
১০. মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
১১. ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাবনা।
১২. প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
১৩. নির্বাচনকালীন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব বণ্টন।
১৪. নির্বাচনী তদারকি সেল গঠন।
১৫. মুদ্রিত ও ডিজিটাল ব্যালটপেপার ব্যবস্থাপনা।
১৬. ফলাফল দ্রুত সংগ্রহ ও ঘোষণার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার।
১৭. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ টাস্কফোর্স।
১৮. ভোটার শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
১৯. গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ নীতিমালা।
২০. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদন।
২১. নির্বাচনোত্তর মূল্যায়ন কার্যক্রম।
২২. প্রশাসনিক সমন্বয় সভা।
২৩. জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকল্প পরিকল্পনা।
২৪. পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ।

রাজনৈতিক গুরুত্ব

বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক মোড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। রোডম্যাপে স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে উঠে আসলেও কার্যকর বাস্তবায়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ভোটকেন্দ্রে নিরাপদ যাতায়াত ও ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাই ইসির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর