মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি, তবু বৈশ্বিক তালিকায় এক ধাপ পিছিয়ে

জাহাঙ্গীর আলম
  • সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৯৩

কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বৈশ্বিক শীর্ষ সমুদ্রবন্দরগুলোর তালিকায় এক ধাপ পিছিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। যুক্তরাজ্যের শিপিং-বিষয়ক শতবর্ষ প্রাচীন ও খ্যাতনামা প্রকাশনা লয়েডস লিস্ট প্রকাশিত ওয়ান হানড্রেড পোর্টস ২০২৫ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

অবস্থান ৬৮তম, আগের বছর ছিল ৬৭তম

২০২৪ সালের হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৬৮তম। এক বছর আগেই বন্দরের অবস্থান ছিল ৬৭তম। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অন্য বন্দরগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিশ্বব্যাপী কন্টেনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কেবল চট্টগ্রাম বন্দরই লয়েডস লিস্টের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় জায়গা পায়। দেশের মোট কন্টেনার পরিবহনের প্রায় ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয় এই বন্দর দিয়ে। বাকিটা হয় মংলা বন্দর হয়ে। ফলে কার্যত দেশের একমাত্র কার্যকর সমুদ্রগেটওয়ে হলো চট্টগ্রাম বন্দর।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার ওঠানো–নামানো হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর স্থবিরতা কাটিয়ে বৈশ্বিক কন্টেনার লজিস্টিকস একটি নতুন প্রবৃদ্ধির পথে প্রবেশ করেছে।

এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এশিয়ার বন্দরগুলো। এককভাবে চীনের বন্দরগুলোই বিশ্ব কন্টেনার পরিবহনের ৪০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন করেছে।

প্রথম স্থানে রয়েছে সাংহাই বন্দর (৫ কোটি ১৫ লাখ টিইইউএস)।

দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর বন্দর (৪ কোটি ১১ লাখ টিইইউএস)।

তালিকার সর্বশেষ অর্থাৎ ১০০তম স্থানে চিলির সান অন্তোনিও বন্দর (১৮ লাখ টিইইউএস)।

অন্যদিকে ভারত, ভিয়েতনাম ও তুরস্ক দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যালেঞ্জ

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কন্টেনার টার্মিনাল, কমলাপুর কন্টেনার ডিপো এবং পানগাঁও নৌ টার্মিনালের সামগ্রিক হ্যান্ডলিং হিসেব করেই তালিকা প্রস্তুত করে লয়েডস লিস্ট। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবৃদ্ধি থাকলেও অন্যান্য দেশের বন্দরগুলো আরও দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করায় র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে যেতে হয়েছে চট্টগ্রামকে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লয়েডস লিস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক তথ্য হাতে পেলে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

এক দশকের উত্থান-পতন

গত এক দশকে চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ২০১৯ সালে, তখন এর অবস্থান ছিল ৫৮তম। এরপর ধাপে ধাপে পিছিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সাল ছিল বৈশ্বিক কন্টেনার লজিস্টিকসের জন্য মোড় পরিবর্তনের বছর। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো—অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিনির্ভর বন্দরের কৌশলগত পুনর্বিন্যাস। নইলে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর