মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণকারী আজিজ ও এজেন্ট উৎপল পালের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা

জাহাঙ্গীর আলম
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৪৯

অর্থপাচার ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পাল এবং ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আবদুল আজিজ।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, এ দুজনই দীর্ঘদিন ধরে জাবেদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। এর মধ্যে উৎপল পাল বিদেশে অর্থ পাচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং আবদুল আজিজ দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও লেনদেন পরিচালনা করতেন।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে দুদক। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় দুদক। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকারম হোসেন সাংবাদিকদের জানান— “তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের উৎস ও লেনদেন চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অভিযানের সময় উৎপল পালের কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করে দুদক। এসব ডিভাইস থেকে বিপুল পরিমাণ গোপন নথি ও যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদক আদালতের কাছে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি চেয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে জাবেদের বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের নানা প্রমাণ মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে আবদুল আজিজ দীর্ঘদিন ধরে দেশে জাবেদের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যাংক লেনদেনেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী, ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানকে ঘিরে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ নতুন নয়।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে—

প্রায় ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে জাবেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

জাবেদ ও রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে অর্ধডজন মামলা বিচারাধীন।

এরই মধ্যে দুদক আদালতের কাছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে।

দুদকের মেট্টো অঞ্চলের উপ-পরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন— “সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ, দেশীয় সম্পদের হদিস এবং সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।”

চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ী পরিবার চৌধুরী হাউসের অংশ হিসেবে আরামিট গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণশিল্প, সিমেন্ট ও স্টিল খাতে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ গ্রেফতারের মাধ্যমে শুধু সহযোগীদের নয়, বরং মূল আসামি সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত আরও গতিশীল ও কঠোর হবে

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর