
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা ও সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ।
শনিবার (১১ অক্টোবর) আনোয়ারা উপজেলা মহিলা দলের আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যায় সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদকে, যিনি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করেন। মুহূর্তেই ঘটনাটি উপস্থিত জনতা ও সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র কৌতূহল, বিস্ময় ও আলোচনার জন্ম দেয়।
চৌধুরী ফরিদ শুধু একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা নন; তিনি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবেও সুপরিচিত। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও সহচর হিসেবে পরিচিত।
গত ৫ আগস্টের আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তিনি ছাত্র–জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘বিএনপি–জামায়াত–শিবিরের অরাজকতা’ হিসেবে আখ্যা দেন, যা তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
কিন্তু সেই একই চৌধুরী ফরিদকে এবার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বৃহত্তর রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে— “দলীয় আদর্শ ও অবস্থান কোথায় দাঁড়ালো?”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা ও প্রেস ক্লাবের সাবেক নেতা হিসেবে তার এই উপস্থিতি দলীয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক কৌশল নাকি ব্যক্তিগত অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত— সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
অন্যদিকে, চৌধুরী ফরিদের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, তিনি সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বন্ধুর আমন্ত্রণে, এবং সেটি ছিল “সম্পূর্ণ সামাজিক সৌজন্য উপস্থিতি।”
তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছেন না। তাদের মতে, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংবেদনশীল হওয়ায় এমন অবস্থান দলীয় ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য একাধিক মামলার আসামি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ–এর ঘনিষ্ঠ বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত চৌধুরী ফরিদ। স্থানীয়রা মনে করছেন, তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড হয়তো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন বিতর্ক ও বিভাজন তৈরি করতে পারে।
আনোয়ারার এই ঘটনাকে অনেকে দেখছেন দলীয় আনুগত্যের ভাঙনের ইঙ্গিত হিসেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এমন বিতর্কিত উপস্থিতি মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও উন্মোচিত করছে।