
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও আর্থিক স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব অনুযায়ী— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি—এই পাঁচটি তফসিলি ব্যাংককে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর আওতায় এনে একীভূত করা হবে।
তবে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর মালিকানা সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারল্য সহায়তা প্রদান করা সত্ত্বেও উক্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি; বরং তাদের তারল্য সংকট আরও গভীর হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ শ্রেণীকৃত ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও প্রভিশন ঘাটতির কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, ফলে জনগণের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর আওতায় এসব ব্যাংককে রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় এনে নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটি সরকারি মালিকানাধীন হবে এবং বাণিজ্যিক ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে নির্ধারিত হবে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানত Bail-in প্রক্রিয়ায় মূলধনে রূপান্তর করা হবে, আর বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার প্রদান করবে—যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নগদ এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা ‘Simulation Exercise’-এর ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের জন্য একটি ফিন্যান্সিয়াল ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে এবং ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের বিশেষ সভায় ‘রেজল্যুশন পরিকল্পনা (স্কীম) ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একীভূত হওয়ার প্রস্তাবিত পাঁচটি ব্যাংকের প্রত্যেকটির Net Asset Value (NAV) ঋণাত্মক—যা তাদের গভীর আর্থিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের NAV -৪৩৮.৮১ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের -১১৭.৭২, ইউনিয়ন ব্যাংকের -২২৪.৯৭, এক্সিম ব্যাংকের -৭৫.৭৪ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের -২১৩.৫১ টাকা।
নতুন ব্যাংক গঠনের পর হস্তান্তরকারী পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও দায়সমূহ নতুন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হবে। তবে, বিদ্যমান মালিক ও শেয়ারহোল্ডাররা এই প্রক্রিয়ায় কোনো আর্থিক দাবি উত্থাপন করতে পারবেন না, কারণ তাদের মূলধন ঘাটতি বিপুল এবং আইন অনুযায়ী দায় সীমিত।
অন্যদিকে, ব্যক্তি আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে দায়ী মালিক, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর শিগগিরই নতুন শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির নিবন্ধন ও কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।