মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন

বর্ধিত ট্যারিফে নতুন চাপ আমদানি–রপ্তানিতে, উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা

জাহাঙ্গীর আলম
  • মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৪০

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে আজ (১৪ অক্টোবর, সোমবার) থেকে কার্যকর হচ্ছে বর্ধিত ট্যারিফ। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বন্দর ব্যবহারকারীদের তীব্র আপত্তি এবং বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর সারচার্জ ঘোষণার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা দাবি করে আসছিলেন, হঠাৎ বিপুল হারে ট্যারিফ বৃদ্ধি দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা দেবে। তারা অন্তত এক বছরের জন্য সিদ্ধান্তটি স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এক মাসের স্থগিতাদেশ শেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মধ্যরাত থেকেই নতুন ট্যারিফ কার্যকর করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এবার গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে ট্যারিফ বেড়েছে চার শত গুণ পর্যন্ত।

বন্দরের মোট ৫২টি সেবাখাতের মধ্যে ২৩টিতে সরাসরি নতুন হারে মাশুল কার্যকর হচ্ছে। ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে—যেখানে প্রতি ডলারের মান ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ফলে ডলার বাড়লে ট্যারিফও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে।

২০ ফুটি কন্টেনারের নতুন ট্যারিফ ১৬,২৪৩ টাকা, পূর্বে ছিল ১১,৮৪৯ টাকা।

আমদানি কন্টেনারে ৫,৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেনারে ৩,০৪৫ টাকা বেশি গুনতে হবে।

প্রতিটি কন্টেনার ওঠানামায় বাড়বে আরও প্রায় ৩,০০০ টাকা খরচ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের অভিযোগ— আলোচনার সুযোগ না দিয়েই একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নৌ–পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে ২০ সেপ্টেম্বর এক মাসের জন্য সিদ্ধান্তটি স্থগিত রাখা হয়। তবে সেই সময়সীমা শেষে আজ মধ্যরাত থেকে নতুন হার কার্যকর হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, “আমরা ট্যারিফ বৃদ্ধির বিপক্ষে নই। কিন্তু একসাথে এত বেশি বৃদ্ধি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে বাড়ালে তা গ্রহণযোগ্য হতো।”

এদিকে, ট্যারিফ বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত সারচার্জ চাপ। ফ্রান্সভিত্তিক সিএমএ সিজিএম (CMA CGM) এবং সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এমএসসি (MSC) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আমদানি–রপ্তানি পণ্যে সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মতে, এসব বাড়তি খরচের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তার ওপরই বর্তাবে। তাদের দাবি, “এক বছরের সময় দিলে ব্যবসায়ীরা নতুন ট্যারিফের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারতেন।”

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ট্যারিফ বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তাদের দাবি, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য প্রধান বন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ এখনো তুলনামূলক কম।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্যারিফ বৃদ্ধি ও সারচার্জের যুগপৎ প্রভাব দেশের আমদানি–রপ্তানি খরচ বাড়াবে। এর প্রভাবে পণ্যমূল্য ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রতিযোগিতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যেন অন্তত আরও কিছু সময় দিয়ে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হয়— দেশের বাণিজ্য পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর