
চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো নবযাত্রা নিউজের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জাতীয় নবযাত্রা টিউন ফেস্ট’২৫।
“আঙুলের ছোঁয়ায় সুর মূর্চ্ছনা” শীর্ষক এই সঙ্গীত উৎসব অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ ও ১২ অক্টোবর (শনিবার ও রবিবার) বিকেলে। উৎসবের সভাপতিত্ব করেন কবি, গিটারিস্ট, সম্পাদক ও অধ্যাপক দুর্জয় পাল।
প্রথম দিনের প্রথম পর্বে নবযাত্রার নারী সদস্যরা বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক পর্দা উন্মোচন করেন।
উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রখ্যাত গিটারিস্ট ওস্তাদ শ্যামল মিত্র, যিনি কেক কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী পরিবেশনায় গিটারের সুরে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন ডা. দীপন বৈদ্য।
চার পর্বে সাজানো উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সিনিয়র বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) জান্নাতুল ফেরদৌস।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন ফারুক,এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল সিআরএস টিভি-এর চেয়ারম্যান সেলিম নূর।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা ও আলোচনা সভা।
প্রতিবছরের মতো এবারও তিন গুণী ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা ও নবযাত্রা পদক প্রদান করা হয়—স্বাস্থ্যসেবায় অবদান: ডা. রজত কুমার বিশ্বাস, সঙ্গীতে (গিটার) অবদান: উস্তাদ বাবুল কান্তি দে, সমাজসেবায় অবদান: শিল্পী রিয়াজ ওয়ায়েজ।
তৃতীয় পর্বে নবযাত্রার নিজস্ব শিল্পীরা হাওয়াইয়ান গিটারে একের পর এক সুর ছড়িয়ে দেন। পরিবেশনায় ছিলেন ডা. দীপন বৈদ্য, ডা. সুজিৎ কুমার বিশ্বাস, ডা. নওশাদ খান, রাজীব চৌধুরী ও দুর্জয় পাল। দর্শকদের অনুরোধে গান পরিবেশন করেন শিল্পী রিয়াজ ওয়ায়েজ।
চতুর্থ পর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পীরা অংশ নেন।
ঢাকা, পাবনা, কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও ফরিদপুরের গিটারিস্টরা মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উপহার দেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—মো. সিদ্দিকুর রহমান বকুল, সৈয়দ এ. রেজা, জিল্লুর রহমান সোহেল, সামিরা যুহরী ইউশা, অঙ্কন রানা, দিলীপ ঘোষ ও প্রকৌশলী শামীম হাসান।
প্রধান অতিথি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “শুধুমাত্র যন্ত্রসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে নবযাত্রার এই আয়োজন সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি যন্ত্রসঙ্গীত চর্চায় নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। নবযাত্রার এই উৎসব একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
প্রধান আলোচক প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন ফারুক বলেন, “আঙুলের ছোঁয়ায় সুরের অনুরণন যেন মনে দোলা দেয়। নবযাত্রার পথচলা হোক দীর্ঘ ও আলো ছড়ানো।”
সভাপতি দুর্জয় পাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নবযাত্রা যন্ত্রসঙ্গীতকে আরও জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনার পর চট্টগ্রামের গিটারিস্ট ডা. বাবুল কান্তি সেনগুপ্ত, ডা. মৌমিতা ঘোষ ও মঞ্জুরুল হক পরিবেশনা করেন।
এস্রাজে মদন মোহন ঘোষ, বাঁশিতে রাসেল দত্ত, তবলায় আদৃত চৌধুরী, প্রান্ত দাশ ও তীর্থ বড়ুয়া সুরের ঢেউ তোলেন।
গিটারিস্ট দুর্জয় পালের বাজনায় নৃত্য পরিবেশন করেন রিয়া দাশ চায়না পরিচালিত দল—যার সদস্য ছিলেন স্বস্তিকা মজুমদার, ফুল মজুমদার, শ্রেয়া বনিক, বর্নি গুহ, রীতি চক্রবর্তী, প্রথমা চক্রবর্তী, অ্যানি সেন, অনন্যা পান্ডে, ঋত্বিকা দাশ, রাশি দাশগুপ্ত, সুহাইলা আফরোজ ও ইদিকণা চৌধুরী।
দুইদিনব্যাপী এই সুরময় উৎসবে উপস্থিত দর্শকরা উপভোগ করেছেন সঙ্গীত ও যন্ত্রানুসঙ্গের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
উৎসবের বিভিন্ন পর্ব পরিচালনায় ছিলেন ডা. দীপন বৈদ্য, ডা. সুজিৎ কুমার বিশ্বাস, ডা. নওশাদ খান, প্রদ্যুৎ কুমার আচার্য, রাজীব চৌধুরী ও রাজীব নন্দী।
সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন দুর্জয় পাল।
যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন তবলায় রাজীব নন্দী, কিবোর্ডে সৈকত নন্দী, অক্টোপ্যাডে রতন মজুমদার, এবং বেস গিটারে এস. এম. শাহাজাহান।
উপস্থাপনায় ছিলেন আবৃত্তিকার দেবাশিস রুদ্র, লাবণ্য মুৎসুদ্দী ও সিমলা চৌধুরী। ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন অরিভিউ মাল্টিমিডিয়া। হল ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সঞ্জয় পাল।
কফি স্পন্সর ছিল আমা কফি,মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল মাসিক নবযাত্রা এবং সিআরএস টিভি।
উৎসবের সমাপনীতে সকল অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের হাতে সুদৃশ্য ক্রেস্ট ও স্মারক তুলে দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।