শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন: উৎসবমুখর ক্যাম্পাসে ভোট চলছে

জাহাঙ্গীর আলম
  • বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তিন যুগেরও বেশি সময় পর আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটগ্রহণ চলবে।

৩৫ বছর পর শিক্ষার্থীদের হাতে ফিরেছে ভোটাধিকার। ফলে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। ব্যানার-পোস্টারে সেজেছে শাটল ট্রেন, একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হল এলাকা।

নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩৪ জন। চাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০৮ জন প্রার্থী।

চাকসুতে ২৬টি পদে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৯৩ জন প্রার্থী লড়ছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে ৪৮ জন নারী ও ৩৬৬ জন পুরুষ প্রার্থী। এছাড়া ২৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পাঁচ অনুষদ ভবনে ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬০টি ভোটকক্ষের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ব্যালট পেপারে ভোট প্রদান শেষে ফলাফল গণনা করা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানান, “একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিটে ভোট সম্পন্ন করতে পারবে, প্রয়োজনে কিছুটা বেশি সময় নিতে পারবে।”

ভোট শেষে প্রতিটি কেন্দ্রেই তাৎক্ষণিক গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অডিটোরিয়াম থেকে।

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব ভোটকক্ষেই সিসিটিভি নজরদারি রয়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ২৫০টি সিসিটিভি ও এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোটের পরিস্থিতি দেখতে পারেন।

সার্বিক নিরাপত্তায় রয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়—পুলিশ, র‌্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দল, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যসহ মোট ১,২০০ জন ফোর্স নিয়োজিত। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, “বহিরাগত প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুধুমাত্র আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছেন।”

প্রায় ১১ হাজার নারী শিক্ষার্থী এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোট দিচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, নারী ভোটারদের উপস্থিতি এবারের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল। এর মধ্যে প্রধান লড়াই ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের মধ্যে হবে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ২৭টি অভিযোগ এসেছে, যা সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমিন মুহাম্মদ নসরুল্লাহ।
ভোটের দিনের জন্য বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখাসহ পাঁচটি ব্যালটে ভোট দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, নির্বাচিত নেতৃত্ব রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে।

চাকসু গঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। এর আগে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর