
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সমন্বয় কমিটির নতুন ঘোষিত কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারীর পদ পেয়েছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান। তবে তার বিরুদ্ধে হত্যা ও চেক জালিয়াতিসহ একাধিক মামলা থাকায় পদ প্রাপ্তিকে ঘিরে দলে ও এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। মামলার বাদী এবং নিহতের পরিবারও ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
৩১ অক্টোবর বিকেলে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ৩৭ সদস্যের এই কমিটি অনুমোদিত হয়। যেখানে কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং হত্যা মামলার আসামি ইমরান হোসেন যুগ্ম সমন্বয়কারীর পদে মনোনীত হন।
এর আগে তিনি ১৩ অক্টোবর রাতে খুলশী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন এবং পরে জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় জাফর হত্যার মামলা ছাড়াও চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দায়রা জজ আদালতে একাধিক চেক প্রতারণার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া ফকির মসজিদের সামনে জাফর আহমদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত জাফরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কর্ণফুলী থানায় ওই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরানসহ মোট ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ছয়-সাতজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
নিহত জাফরের ছেলে মোহাম্মদ আবছার বলেন,
“আমার বাবার হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি আজ জেলা পর্যায়ের দলীয় নেতৃত্বে। এই ঘটনায় আমরা পরিবারসহ আতঙ্কে আছি। আমরা আশঙ্কা করছি—বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান দাবি করেন, তিনি নির্দোষ এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি বলেন,
“জাফর খুন হওয়ার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। আওয়ামী লীগের লোকজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে মামলায় ফাঁসিয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি।”
তিনি আরও দাবি করেন,“মামলার ২ নম্বর আসামি একজন বিএনপি নেতা, আমার মা ৩ নম্বর এবং ভাই ৪ নম্বর আসামি। সবই ষড়যন্ত্র।”
এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগর সমন্বয় কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রিদুয়ান হৃদয় বলেন,
“তার (ইমরান) নাম ঘোষণার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তিনি হয়তো ষড়যন্ত্রের শিকার। তারপরও বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলন করবো।”
একাধিক মামলা ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে জনমত বিভক্ত হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এ ধরনের পদায়ন কি বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাকে দুর্বল করছে? অন্যদিকে দলীয় নেতৃত্বের দাবি—বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় না।