
বাংলাদেশের স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরসমূহের দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। নৌপরিবহন ও শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, এই কৌশলপত্রের খসড়া প্রণয়ন ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই এটি চূড়ান্ত করা হবে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাপান সরকার ও জাইকার সহযোগিতায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান। সভায় দেশের সমুদ্র, নদী ও স্থলবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বন্দরসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বন্দরকেন্দ্রিক বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি জিডিপিতে অসামান্য অবদান রাখছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কোনও সমন্বিত জাতীয় বন্দর কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়নি। এখনই সময়—একটি সমন্বিত, টেকসই ও আধুনিক কাঠামো গড়ে তোলার।”
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলো এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এই স্ট্র্যাটেজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপদেষ্টা জানান, এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্মে বন্দরকেন্দ্রিক সব সেবা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“ব্যবসায়ীরা যাতে স্বল্প সময়ে হয়রানিমুক্ত সেবা পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হবে।”
তিনি বলেন, “ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি কার্যকর হলে দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এতে সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রম একীভূত হয়ে সুশৃঙ্খল ও গতিশীল বাণিজ্য প্রবাহ নিশ্চিত হবে।”
কৌশলপত্র প্রণয়নে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জাইকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অংশগ্রহণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। তারা উন্নত দেশগুলোর বন্দর ব্যবস্থাপনা মডেল পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের উপযোগী কাঠামো তৈরি করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় পোর্ট স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ মেরিটাইম সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মুখ দেখতে পাবে।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে নৌপরিবহন সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী (এনডিসি) বলেন, “মাননীয় উপদেষ্টার সার্বিক দিকনির্দেশনায় প্রণীত এই ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি বাংলাদেশের আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এটি ভবিষ্যৎ মেরিটাইম সেক্টরের এক অনবদ্য দলিল।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান ফোকাল পারসন হিসেবে বক্তব্য দেন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে ধন্যবাদ জানান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চলতি বছরেই চূড়ান্ত হতে যাওয়া ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫’ বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পাশাপাশি দেশীয় বাণিজ্য প্রবাহকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।