বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি বেড়েই চলেছে, নিহত ৭৬ ফিলিস্তিনি

বার্তা টুডে আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৩৪

গাজায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা হামলায় একের পর এক বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৯৮ জন। বুধবার সন্ধ্যার পর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত প্রায় দুই বছরে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৮৯৫ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৭ জন। সর্বশেষ নিহতদের মধ্যে ৬৬ জন সরাসরি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি ও গোলার আঘাতে প্রাণ হারান। এছাড়া অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছেন আরও ১০ জন, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু।

কেবল বুধবার দিনের হিসাবেই অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১১৯ জন।

ত্রাণ সংগ্রহেও হামলা

গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলার কারণে। গত ২৪ ঘণ্টায় খাদ্য ও ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১০৬ জন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে এ ধরনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৮ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৮৪৩ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ৭৬ জনের মরদেহ এবং ২৯৮ জন আহতকে আনা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছেন, যাদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি সরঞ্জাম ও জনবল ঘাটতির কারণে।”

দুই বছরব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাত

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায়। ওই ঘটনায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
এরপর ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) গাজায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গত ১৫ মাসে হামলায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক চাপ ও ইসরায়েলের অবস্থান

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। তবে এখনও হামাসের হাতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন বলে দাবি করছে আইডিএফ।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, “হামাস সম্পূর্ণ দুর্বল ও অকার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এভাবে চলতে থাকলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো খবর