
পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি রোধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে চাঁদাবাজি হবে কি হবে না, তা আমি বলতে পারব না। তবে আমরা যে ব্যবস্থা নিচ্ছি, সেটা পুরোটাই ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রাম বন্দরও পুরোটাই ডিজিটাল হবে। তখন আশা করি চাঁদাবাজি কমে যাবে।”
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে নগরের বে টার্মিনাল এলাকায় পরিবহন টার্মিনাল উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. সাখাওয়াত বলেন, “চাঁদাবাজি কারা করছে, তা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমি বলতে পারব না। আমি নাম জানি না, কিন্তু চাঁদাবাজি হচ্ছে—এটা তো সবাই জানে। আমি ইনভেস্টিগেটর নই, তাই তদন্ত করতে পারি না; তবে আমরা যেভাবে ডিজিটালাইজেশনের পথে এগোচ্ছি, তাতে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে বিশ্বাস করি।”
উপদেষ্টা জানান, বে টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন,
“আমি প্রথম যখন বে টার্মিনাল এলাকায় আসি, তখন বিতর্ক ছিল—বে টার্মিনাল হবে কি না। আমি জায়গাটি দেখে বলেছিলাম, এটা আদর্শ স্থান। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান বন্দর। যদিও আরও কিছু বন্দর আছে, তবে চট্টগ্রাম বন্দর দিন দিন ব্যস্ত হচ্ছে। বে টার্মিনাল একটি পুরনো প্রকল্প হলেও এখন সরকার সেটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে দুইটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি বিনিয়োগ করছে, সরকার টু সরকার (G2G) পদ্ধতিতে কাজ চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “বে টার্মিনাল চালু হলে আলাদা রাস্তা ও ভবিষ্যতে রেল সংযোগের পরিকল্পনা থাকবে। এ এলাকা পুরোপুরি বদলে যাবে, গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। লালদিয়া এলাকায় কাজ শেষ হলে বে টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হবে। এটি হবে একটি গ্রিন পোর্ট—পরিবেশবান্ধব আধুনিক বন্দর।”
পরিবেশবিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, “অভিযোগ তো করতেই পারেন, কিন্তু কেউ যদি বলে গাছ কেটে ফেলছে—আমাকে দেখান কোথায় কাটা হচ্ছে। অভিযোগ মানেই সত্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “১৭ বছর কেউ কথা বলতে পারেনি, এখন সবাই বলছে—এটা স্বাভাবিক। সরকার দেশের জন্য যা ভালো মনে করে, তাই করছে। কোনো দেশি অপারেটরের একার সাধ্য নেই এ ধরনের মেগা প্রকল্প পরিচালনার। বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা লাগবে।”
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা বলেন, “আজকের বাংলাদেশ ১৯৭৫ বা ১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ নয়। এখন ২০২৫ সাল, বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। চীনে গিয়ে দেখেছি পুরো বন্দর চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে। ৫-১০ জন মানুষ বিশাল বন্দর পরিচালনা করছে। আমরা যদি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ না করি, তাহলে বিশ্বের পেছনে পড়ে থাকব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আল্লাহ আমাদের মুখ দিয়েছে, ব্রেন দিয়েছে—এগুলো ব্যবহার করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। যারা কথা বলতে পারছে না, তাদের হয়ে আমরা কথা বলব। সরকার দেশের মঙ্গলের জন্য যা ভালো মনে করে, সেটাই করবে।”
বে টার্মিনাল প্রকল্পকে ঘিরে সরকারের বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যে স্পষ্ট, বন্দর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও ডিজিটাল করে তোলার মধ্য দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর বন্দর।