
দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে। পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (PICT) পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে ২২ বছরের মেয়াদি একটি কনসেশন চুক্তি সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাক্ষরিত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম আনিসুল মিল্লাত তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন—“বন্দর ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে আজ একটি স্মরণীয় দিন। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত পানগাঁও টার্মিনালের এই চুক্তি বাংলাদেশের লজিস্টিক সক্ষমতায় নতুন দ্বার উন্মোচন করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। মেডলগের গ্লোবাল দক্ষতা ও বাংলাদেশের কৌশলগত পরিকল্পনা একত্রিত হলে বিশ্বে লজিস্টিক খাতে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে পারবো।”
মেডলগ বাংলাদেশ পানগাঁও টার্মিনাল পরিচালনা, নিরাপত্তা, সরবরাহচক্র ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশনের দায়িত্ব নিয়েছে।
বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ লজিস্টিক্সকে আরও দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
চুক্তির আওতায় টার্মিনালটির বার্ষিক হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ১ লক্ষ ৬০ হাজার TEU পর্যন্ত উন্নীত করা হবে, যা দেশের বন্দর কার্যক্রমে বিশাল অগ্রগতি সূচিত করবে। অভ্যন্তরীণ ট্রান্সপোর্ট মডেল হিসেবে মেডলগ বন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বার্জ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও রিফার যানবাহন পরিচালনা করবে।
সংলগ্ন জমিতে নির্মিত হবে আধুনিক খালি কন্টেইনার স্টোরেজ, মেরামত ইয়ার্ড ও সমন্বিত কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন, যেখানে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং রিফার কানেকশন সুবিধা থাকবে। গুদামজাত ও বিতরণ ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করা হবে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে।
এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশ্বমান নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন্দর ও নৌপথকে শক্তিশালী করে বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের বড় একটি পদক্ষেপ এটি।
অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার চলাচল আরও সহজ ও দ্রুত হবে, যেটি দেশের বাণিজ্য খাতে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে—এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।
পরিশেষে বলা যায়, পানগাঁও টার্মিনাল ব্যবস্থাপনায় মেডলগের সাথে এ চুক্তি বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতে সবচেয়ে বড় টেকসই ও রূপান্তরমূলক বিনিয়োগের অন্যতম একটি মাইলফলক। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রবাহ হবে আরও সহজ, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য।