
আজকের সমাজে আমরা এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি — দিন দিন বাড়ছে নীতি-নৈতিকতাহীন অমানুষের সংখ্যা। সভ্যতা যতই আধুনিক হচ্ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বাড়ছে, ততই যেন কমে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব, মমত্ববোধ ও মানবিকতার জৌলুশ। একসময় যে মূল্যবোধ ও আদর্শ ছিল জীবনের চালিকাশক্তি, তা আজ পেছনের আসনে।
নীতিহীন মানুষ জন্ম নেয় না, সমাজই তাকে তৈরি করে। আমরা এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করছি, যেখানে দুর্নীতি স্বাভাবিক, মিথ্যা বুদ্ধিমত্তা আর স্বার্থপরতাই চতুরতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন একজন সৎ মানুষকে “বোকা” ভাবা হয়, আর একজন চতুর প্রতারককেই “স্মার্ট” হিসেবে প্রশংসা করা হয়।
এক সময় ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হতো—সততা, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার গুরুত্ব। কিন্তু আজকের পাঠ্যপুস্তকে এসব নীতিশিক্ষা থাকলেও বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। বাবা-মা সন্তানকে শেখান কীভাবে প্রতিযোগিতায় জিততে হয়, কিন্তু বলেন না কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয়।
নীতিহীন অমানুষ কেবল অপরাধী নয়, তারা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে থাকে—রাজনীতিতে, ব্যবসায়, এমনকি শিক্ষা বা ধর্মের খোলসেও। তারা সুযোগ পেলেই অন্যকে ঠকায়, নিজের লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি করতে পিছপা হয় না। তারা মুখে আদর্শের বুলি আওড়ালেও কাজে তার ছিটেফোঁটাও নেই। আর এসবই ঘটছে আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত—কখনও ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, কখনও শিক্ষকের হাতে ছাত্র নিপীড়ন, আবার কখনও জনপ্রতিনিধির হাতে জনগণের বিশ্বাসহানি।
আমরা যদি এখনই না জাগি, তবে একসময় সমাজে প্রকৃত মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়বে। আমাদের দরকার এক নতুন নৈতিক বিপ্লব—যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মূল্যবোধ হবে জীবনযাপনের অংশ, আর সত্য-ন্যায় হবে আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস।
আমরা সবাই এই সমাজের অংশ। তাই দায়িত্বও আমাদের সবার। সন্তানদের মাঝে মানবিকতা গড়ে তুলুন, নিজের জীবনেও সততা ও সহানুভূতি চর্চা করুন। তবেই হয়তো এই অন্ধকার সময়কে পেছনে ফেলে আবারও গড়ে তোলা যাবে একটি আলোকিত সমাজ, যেখানে মানুষের ভিড়ে অমানুষ নয়, প্রকৃত মানুষই থাকবে সামনে।