
পল্টন শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী স্টেডিয়ামে শনিবার শুরু হয়েছে ৩৬তম জাতীয় নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা। রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও এরই মধ্যে আলোচনায় চলে এসেছেন বাংলাদেশ পুলিশের খেলোয়াড় তানজিমা আক্তার। মাঠে প্রতিপক্ষকে সামলাচ্ছেন তিনি, আর মাঠের বাইরে সামলাচ্ছেন ১১ মাস বয়সী সন্তান তাওহিদুল কবিরকে।
কুমিল্লার মেয়ে তানজিমার পুলিশে চাকরি হয় ২০১৭ সালে। তবে হ্যান্ডবলের সঙ্গে যুক্ত হন ২০২০ সালে। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন পুলিশ দলের অন্যতম ভরসার খেলোয়াড়। বর্তমানে স্বামী তানভীর আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। তানভীরও পুলিশে কর্মরত, বর্তমানে ৯৯৯-এ দায়িত্ব পালন করছেন। খেলাধুলায় স্ত্রীকে সবসময় সমর্থন দেন বলে জানান তিনি।
রবিবার কুষ্টিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর মাঠ ছাড়ার সময় মায়ের কণ্ঠে ধরা দিলো সন্তানের টান, ‘মাঝে মাঝে বাবুকে রেখে খেলতে কষ্ট হয়। তবে সব কিছু মিলিয়ে মানিয়ে নিচ্ছি। ট্রেনিংয়ের সময় ছেলেকে ওর বাবা দেখে রাখে। আত্মীয়রাও পাশে থাকে। আমার মা অসুস্থ বলে ঢাকায় আসতে পারেন না। মা এলে আরও সুবিধা হতো।’
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন তানজিমা। কিন্তু সন্তানের কান্না তাকে বারবার বিচলিত করে তোলে, ‘অনুশীলন করতে কষ্ট হয় না। কিন্তু ছেলে কান্নাকাটি করলে খারাপ লাগে। চাকরির কারণে এসব মেনে নিতে হয়।’
শুধু খেলায় নয়, দায়িত্ববান পুলিশ সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন তানজিমা। কখনও ছাত্র আন্দোলন, কখনও রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাকে। ‘কখনও বেশি ডিউটি থাকলে খেলা বাদ দিয়ে দায়িত্বে যেতে হয়। আন্দোলন, মিছিল—সব রকম ডিউটি করেছি,’ বললেন তিনি।
বাংলাদেশ পুলিশের নারী হ্যান্ডবল দল দেশের শক্তিশালী দলগুলোর একটি। ২০১৭ সালে তারা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং সর্বশেষ আসরে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে এখনও জাতীয় দলে সুযোগ পাননি তানজিমা। সুযোগ পেলে অবশ্যই খেলতে চান লাল-সবুজ জার্সিতে, ‘অন্য সবার মতো আমারও স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলার। তবে ছেলে আরেকটু বড় হলে ক্যাম্পে যোগ দেবো।’
একসঙ্গে ঘর, সন্তান, চাকরি ও খেলাধুলা সামলে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তানজিমা আক্তার। মাঠে যেমন লড়াই করছেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে, মাঠের বাইরেও লড়ছেন মাতৃত্ব আর দায়িত্বের চাপে। অনেক নারী খেলোয়াড়ের কাছে তাই অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছেন তিনি।