
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট—দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্র। প্রতিদিন শত শত যানবাহন, পণ্যবাহী ট্রাক, বাস ও অটোরিকশা চলাচল করে এ অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এ এলাকার প্রধান সড়ক ও বাজার এলাকায় অবৈধ দোকান, ফুটপাত দখল এবং গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে চরম যানজটে ভুগছে স্থানীয় মানুষ।
সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেরানীহাট বাজার এলাকায় একাধিক অবৈধভাবে স্থাপিত দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে কিছুদিনের জন্য চলাচলে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, উচ্ছেদের কিছুদিন পরই অন্য একপক্ষ নতুন করে অবৈধভাবে দোকান ও স্থাপনা স্থাপন করে আগের অবস্থান দখল করে নেয়।
এদিকে কেরানীহাট এলাকার অকেজো ও নষ্ট ট্রাক-ডাম্পার সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মালিকদের নোটিশ জারি করা হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই সেই গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও, খালি জায়গাগুলো আবার অন্য মালিকের বাস, ট্রাক ও ডাম্পার দখল করে নেয়। ফলে সড়কের পরিস্থিতি আবার আগের মতোই বেহাল।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। কারণ, উচ্ছেদ শেষে স্থানগুলো আবারও দখল হয়ে যায় নতুনভাবে। কেউ কেউ মনে করছেন, প্রশাসনকে শুধু উচ্ছেদে সীমাবদ্ধ না থেকে স্থায়ী নজরদারি ও মনিটরিং বাড়াতে হবে।
কেরানীহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে যে দোকান বা গাড়ি উচ্ছেদ হয়, কয়েকদিন পরই দেখা যায় অন্য কেউ এসে জায়গা দখল করে বসে গেছে। প্রশাসন একবার এসে চলে গেলে আর ফিরে তাকায় না।”
অন্যদিকে সাধারণ পথচারী ও পরিবহন শ্রমিকরা মনে করছেন, সমস্যা শুধু প্রশাসনের নয়, স্থানীয় সচেতনতার অভাবই মূল বাধা। সাতকানিয়া বাসী নিজেরা না চাইলে কিংবা পরিবহন মালিকরা না বুঝলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।
একজন স্থানীয় পরিবহন মালিক বলেন, “যানজট নিরসনে প্রশাসন বারবার অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু মালিক-শ্রমিকদের সদিচ্ছা না থাকলে কোনো আইনই কার্যকর হবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, কেরানীহাটের যানজট সমস্যা কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট পার্কিং জোন ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা।
জনগণের প্রত্যাশা—উপজেলা প্রশাসন যেন নিয়মিতভাবে তদারকি চালিয়ে যায় এবং বাজার এলাকার স্থায়ী দখলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে।
কারণ, কেরানীহাট শুধু সাতকানিয়ার নয়, পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এখানকার যানজটমুক্ত সড়কই পারে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি আনতে।